মো.শহিদুল ইসলাম জেমস:
আমরা সকলেই জানি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। যার মূল ভিত্তি হল প্রাথমিক শিক্ষা। মাতৃদুগ্ধ যেমন প্রতিটি শিশুর জীবন গঠনে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে ঠিক তেমনি, মানব জীবন গঠনে প্রাথমিক শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এই প্রাথমিক শিক্ষাকে গতিশীল করতে উপজেলা পর্যায়ে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ে এ কমিটি যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এই কমিটির উপদেষ্ঠা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এই কমিটির চেয়ারম্যান এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বিভিন্ন দপ্তরের দপ্তর প্রধান সরকারী কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গও এই কমিটিতে অন্তরভূক্ত আছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি উপজেলা পর্যায়ে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের সঠিক মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।
এই কাজ গুলোকে মোট ৪টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
১. একাডেমিক কার্যক্রম
২. প্রশাসনিক কার্যক্রম
৩. বিদ্যালয় সমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং
৪. অন্যান্য কাজ।
প্রথমত, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সবচেয়ে কার্যকরী ও ফলদায়ক বিষয়টি হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল রাখা। আর এটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা কমিটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক অবস্থার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের লক্ষ্যে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো পরিদর্শন করা এবং শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও শিক্ষকদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করলে নিশ্চিতভাবে বিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কার্যক্রমের গুণগত মান বাড়ে।
দ্বিতীয়ত, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি প্রশাসনিক পর্যায়েও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যেমন- প্রচলিত নীতিমালার আলোকে বিদ্যালয় এমপিও ভূক্তি এবং শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়াদি যাচাই করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করেন। উপজেলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সুপারিশ প্রদান করে থাকেন। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার বৃদ্ধি, ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয় হতে ঝরে পড়া রোধ, ৬-১০ বছর বয়সী সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিশু জরিপের সঠিকতা যাচাই ইত্যাদি বিষয় পর্যালোচনা এবং এগুলো সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ কর্তৃক প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ নিয়মিত ভাবে পরিদর্শিত হচ্ছে কিনা তা পরিবীক্ষণ করা।
তৃতীয়ত, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়নকল্পে বিদ্যালয় পুন:নির্মাণ ও মেরামতের জন্য অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করতে হয়। সে অনুযায়ী বরাদ্দ প্রাপ্তির আবেদন করলে বিদ্যালয় গুলোতে আর্থিক বরাদ্দ আসে। সেই বরাদ্দ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সকল সদস্য এই উন্নয়নমূলক কাজের পরিদর্শন, যাচাই ও মতামত প্রদান করতে পারেন।
চতুর্থত, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব ও পালন করে থাকেন। যেমন-যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন জাতীয় বিদস উদযাপনে ভূমিকা রাখা। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সম্পন্ন হবার ক্ষেত্রেও এভাবেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। প্রতি মাসেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির নিয়মিত সভা আহবান করতে হয়। সভায় কমপক্ষে নয় জন সদস্য উপস্থিত থাকলেই সভার কোরাম পূর্ণ হয়েছে মর্মে বিবেচিত হয়।
এই সভায় রেজুলেশন পাঠ করা হয়, সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং রেজুলেশন অনুমোদন করা হয়।
উপজেলা পর্যায়ে তাই প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির বিভিন্ন কার্যক্রমের বদৌলতে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মান সম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে। গুনগত শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্তরায়সমূহ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিলে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে মিলতে পারে আশাপ্রদ ফল। আর এর ফলে সমৃদ্ধ হবে দেশ, সমৃদ্ধ হবে জাতি।
লেখক:
মো.শহিদুল ইসলাম জেমস,
উপজেলা চেয়ারম্যান,
অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ।
Leave a Reply