কাজী সামছুজ্জোহা মিলন,মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে জনতার হাতে আটক পুত্রবধূকে উত্যক্তকারী শ্বশুড়কে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
এনিয়ে এলাকায় দারুন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সেকেন্দার আলী (৬০) নামে পলাতক ওই শ্বশুড়ের দেখা পেলে গ্রামবাসীরা যেকোন ব্যবস্থা নিতে পারেন বলে আশংকা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যৌন হয়রানীর মত অপরাধ টাকার বিনিময়ে আপস করা হয়েছে। আর প্রশাসন বলছে নির্যাতিতা শেষ মূহুর্তে তার শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের শিবরামপুর বরাইলহাট গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে সেকেন্দার আলীর স্ত্রী বিদেশে থাকার সুবাদে তার পুত্রবধূকে প্রায়ই উত্যক্ত করতেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গত বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে কয়েকশ’ গ্রামবাসী সেকেন্দার আলীর বাড়িতে গিয়ে এর প্রতিবাদ জানালে ভয়ে তিনি তার ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখেন। গ্রামবাসী তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখে।
খবর পেয়ে সন্ধ্যায় ওই ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার সাইদুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চৌকিদার নিয়ে তাকে উদ্ধার করে সিএনজিযোগে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানেও কয়েকশ’ গ্রামবাসী ভীড় জমান।
বিষয়টি তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান পরদিন দুপুরে সেখানে হাজির হন। সে পর্যন্ত সেকেন্দার আলীকে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের একটি ঘরে আটক রাখা হয়। সেখানে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সেকেন্দার আলীর পুত্রবধূ অভিযোগ করেন যে, শ্বশুড় সেকেন্দার প্রায়ই তাকে উত্যক্ত করতেন এবং মারধর করতেন। বিষয়টি কাউকে জানালে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন।
সম্প্রতি তার পুত্রবধূ বিষয়টি প্রতিবেশী কয়েকজন মহিলাকে জানালে গ্রামে কানাঘুঁষা শুরু হয়। তিনি তার লম্পট শ্বশুড়ের বিচার দাবি করেন। তার এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
খবর পেয়ে গত শুক্রবার বিকেলে মহাদেবপুর থানার এসআই ফারুক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে সেকেন্দার আলীকে থানায় নিয়ে যান। কিন্তু রাত ৮টার দিকে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, সেকেন্দার আলীর পুত্রবধূ তার শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এনিয়ে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সাথে সাথেই সেকেন্দার আলীকে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হলেও সাথে সাথেই তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়নি। বরং তাকে প্রায় ২৪ ঘন্টা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে অবৈধভাবে আটকে রেখে টাকার বিনিময়ে আপস করানো হয়েছে। এই কারণেই তার পুত্রবধূ মামলা করতে চাননি। যৌন হয়রানীর মত স্পর্শকাতর বিষয় আপস করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বর্তমানে সেকেন্দার আলী পলাতক রয়েছেন।
ইউপি মেম্বার সাইদুর রহমান জানান, তিনি প্রাণ বাঁচাতে সেকেন্দার আলীকে গ্রামবাসীর কাছ থেকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে নিয়ে গেছেন। পরের ঘটনায় তিনি জড়িত নন।
ইউপির চেয়ারম্যান আবু হাসান ঘটনার বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি উভয়পক্ষের মধ্যে কোন আপস করে দেননি বলে দাবি করেন। সেকেন্দার আলীকে দীর্ঘ সময় কেন আটক রাখা হলো তাও তিনি জানাতে পারেননি। স্থানীয়রা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply