শাফায়েত নাজমুল, কিশোরগঞ্জঃ
দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিদের স্থানীয় সাংসদ ডাঃসৈয়দা জাকিয়া নুর লিপির আতিথেয়তায় মুগ্ধ বিভিন্ন জেলা , উপজেলাসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা।
ঈদের দিন দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসুল্লিদের ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ ১ (সদর- হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির উদ্যোগে পায়েশ, মিষ্টি ও ঠান্ডা পানীসহ বিভিন্ন খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয় ৷
অপরদিকে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম এর নির্দেশে জেলা পুলিশও আগত মুসুল্লিদের নামাজের জন্য পলিথিন ও খাবার পানি বিতরণ করেছে।
এতে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা শতফুর্ত অংশ নেন।
চারস্তরের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এই মাঠের ঈদুল ফিতরের ১৯৬ তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল নয়টার আগেই ঈদ জামাতে অংশ নিতে মুসুল্লীদের উপস্থিতিতে বিশাল ঈদগাহ ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সকাল ১০ টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবারের ঈদ জামাতে পাচঁ লক্ষাধিক মুসুল্লী জামাত আদায় করেছেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে তিনবার বন্দুকের গুলি ফুটিয়ে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সঙ্কেত দেওয়া হয়। জামাতের পর খুতবা পাঠ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়।
ঈদ জামাতে দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করে রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি ট্রেন ছেড়ে আসে ময়মনসিংহ থেকে ও অপরটি ছেড়ে আসে ভৈরব থেকে। তবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসাবে টুপি, মাস্ক ও জায়নামাজ ছাড়া সব কিছু বহন ও শহরে যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকায় রোদ অপেক্ষা করে গরমে কিছুটা মুসুল্লীরা ভোগান্তিতে পড়েন। মুসুল্লীদর সহায়তার জন্য মাঠে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিক্যাল টিম দায়িত্ব পালন করে।
২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার কথা মাথায় রেখে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোষাকে নজরদারি করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
এছাড়াও মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে ছিল সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়েছে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা।
মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সনে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহন করেন বলে মাঠের নাম হয় “সোয়া লাখি মাঠ”। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠ। মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রায় সাত একর আয়তনের মাঠটিতে ২৬৫টি কাতার রয়েছে।
Leave a Reply