নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার মিলেছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা।শুধু কি টাকা! টাকার সাথে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ মিলেছে বিদেশি মুদ্রাও। এবার পাওয়া গেছে হীরের গহনাও! সোনা রুপা হীরের অলঙ্কার মিলে ওজন হয়েছে চার কেজির মতো।
শনিবার (৬ মে) দিনব্যাপী গণনা শেষে রাত ৯ টায় টাকার এ হিসাব পাওয়া গেছে।
সাধারণত তিন মাস পর পর দানের টাকায় ভরে যায় পাগলা মসজিদের সিন্দুক গুলো। এ কারণে প্রায় তিন মাস পরপর খোলা হয় এগুলো। রমজানের কারণে এবার ১১৮ দিন পর খোলা হয়েছে সিন্দুক। এ কারণে টাকা উপচে পড়ার অবস্থা হয়েছিল সিন্দুকগুলোতে।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক কাজী মহুয়া মমতাজের তত্ত্বাবধানে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। প্রথমে টাকাগুলো বস্তায় ভরা হয়। আটটি দানবাক্সে এবার ১৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। দিনভর গণনা শেষে পাওয়া গেছে এ টাকা। এবারের টাকার পরিমাণ এর আগের বারের চেয়ে ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৯৪৫ টাকা বেশি।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী রাত ৯টার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এ ছাড়াও পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা। তখন অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ৩ মাসে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়েছিল মসজিদের দানবাক্সগুলোতে।
টাকা গণনা কাজে ২০০ জনের প্রায় ১৩ ঘন্টা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ। এবারের টাকার পরিমাণ আগের রেকর্ড অতিক্রম করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গণনায় অংশ নেয়া হেফজখানা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবদুর রহিম ও মো. সাজিদ হোসাইন জানান, দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেন। তারা আরও জানান, আমরা সবসময়ই অপেক্ষায় থাকি কবে মসজিদের দানবাক্স খোলা হবে। একসঙ্গে এত টাকা দেখতে এবং গুণতে আমাদেরও খুব ভাল লাগে।
টাকা গণনার সময় সিনিয়র সহাকরী কমিশনার শেখ জাবের আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোছা. নাবিলা ফেরদৌস, সাদিয়া আফরীন তারিন, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা মো. আনোয়ার পারভেজসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
গণনা চলাকালে দুপুরে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, কিশোরগঞ্জের পৌর মেয়র ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সম্পাদক মো. পারভেজ মিয়া গণনার কাজ পরিদর্শন করেন।
মানুষের ধারণা, এখানে দান করলে আয়-উন্নতি বৃদ্ধিসহ বিপদ-আপদ দূর হয়। পূরণ হয় মনোবাসনা। এ কারণে এই মসজিদের দান বাক্সে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়। দান হিসেবে এত টাকা বাংলাদেশের আর কোনো মসজিদে পাওয়া যায় না।
Leave a Reply