কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ও ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতকে ঢেকে দেয়া হয় নিরাপত্তার চাদরে। রেওয়াজ অনুযায়ি জামাত শুরুর ৫ মিনিট, ৩ মিনিট ও ১ মিনিট আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শর্ট গানের গুলি ছুড়ে মুসুল্লিদের নামাজের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানানো হয়।
বুধবার (২৮ জুন) থেকেই টানা বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজেই বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ঈদের দিন সকাল থেকে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আসতে শুরু করেন মুসুল্লিরা। এবার সকাল ৯টায় ১৯৬তম ঈদুল আজহার জামাতে ইমামতি করেন জেলা শহরের মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান।
প্রতি বছরেই ঈদুর ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহায় জামাতে অংশ নেয়া মুসুল্লিদের সংখ্যা কিছুটা কম হয়ে থাকে। তবে এবার ঈদের আগে থেকেই ভারী বৃষ্টি বর্ষনের কারণে মুসুল্লির সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। সকাল ৯টায় নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। বরাবরের মতো দেশের বিভিন্ন জেলার মুসুল্লিরা অংশ নেন শোলাকিয়া মাঠের ঈদ জামাতে।
কুমিল্লা ও ঢাকা থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নিতে আসা কয়েকজন মুসুল্লি জানান, দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মাঠে নামাজ আদায় করে মনটা ভালো লাগছে। যদিও বৃষ্টিতে ভিজে নামাজ পড়েছি, তবুও মনে শান্তি লাগছে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজ চলাকালীন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গিদের অতর্কিত হামলায় দুই পুলিশ সদস্য সহ নিহত হয় চার জন। সেই থেকে ঈদের জামাতে বাড়তি নিরাপত্তার উপর জোর দেয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঈদগাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ছিলো ৬ টি ওয়াচ টাওয়ার। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বেশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিলো জেলা শহরসহ ঈদগাহ মাঠ। দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের সুবিধার্থে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করেছে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসুল্লিদের নামাজের জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা প্রদান এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকেই কাজ করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এমন বৈরী আবহাওয়াতে শান্তিপুর্নভাবে নামাজ শেষ হয়েছে এতে করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
১৮২৮ সালে প্রথম ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নামকরণ হয় “সোয়ালাখিয়া”। যা এখন কালের পরিক্রমায় শোলাকিয়া নামে পরিচিত।
Leave a Reply