এম.আর রুবেল, ভৈরব প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সেচ প্রকল্পের বিদ্যুতিক পাম্প চুরি, ভাংচুর ও বাড়ি অবরুদ্ধের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের গাজীরটেক এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে গত ১৫দিন ধরে দুটি পক্ষ একে অন্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও সেচ প্রকল্পের পাম্প চুরি ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ এনে দুই পক্ষই থানায় মামলা ও অভিযোগ দায়ের করেছে একে অপরের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, পূর্বশত্রুতার জেরে গত ১৪মার্চ, ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের গাজীরটেক গ্রামের মৃত সামসু মিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবিরের বাড়ির সামনে একটি করবস্থানের জায়গা দখলে নিতে গিয়ে ওই বসতঘরের মূলফটকের সামনে বাশঁঝাড় দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এলাকাবাসী লোকজন।
এছাড়াও গত ২৬মার্চ, হুমায়ুন কবিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, লুটপাট ও বাড়ি ভাংচুরসহ ওই পরিবারের কয়েকজনকে মারপিট করারও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে একই এলাকার প্রতিপক্ষ শহিদ মিয়ার সেচপাম্প ভাংচুর ও চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম ও হুমায়ুন কবিরসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। এবিষয়ে শহিদ মিয়া বাদী হয়ে ভৈরব থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ে করেছে ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম (৫৫), তার ছেলে বিজয় (৩০), হুমায়ুন কবির (৪০) ও আঃ সাত্তার (৩৫) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬জনের নামে।
সেচপাম্প ভাংচুর ও চুরির ঘটনায় জইল্লার বনের অন্তত ৪০ একর কৃষি জমিতে এক সপ্তাহ ধরে সেচ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে শতাধিক কৃষক। ধানের জমিতে এখন ধানের শীষ আসার সময় হয়েছে। এসময় জমিতে পানি না পাওয়ায় ধানের শীষ বের হওয়াতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনটি সেচপাম্পের মধ্যে একটি সেচপাম্প চুরি হয় এবং বাকী দুটি সেচপাম্প ও ঘর ভাংচুর করা হয়। এতে কৃষকরা আতংকিত ও অনিরাপদ মনে করে বাকী দুটি সেচপাম্পের সেচ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এবিষয়ে সাধারণ কৃষকরা ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
কয়েকজন কৃষক জানান, জায়গা সংক্রান্ত শত্রুতার জেরে গত ২৬ মার্চ রাতে আনুমানিক চারটার দিকে প্রতিপক্ষ আবুল কালাম, বিজয়, হুমায়ুন কবির ও আঃ সাত্তারসহ অজ্ঞাতনা ৫/৬জন লোক দেশীয় অস্ত্রেও ভয় দেখিয়ে জইল্লার বন কৃষিজমিতে সেচ দেয়া তিনটি সেচপাম্পের মধ্যে একটি চুরি করে নিয়ে যায় এবং বাকী দুটি পাম্প নষ্ট করা হয়। এসময় সেচ পাম্পের কর্মচারী তুফান বর্মণের আত্নচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। এসময় বিদ্যুতিক পাম্পের ঘর ভাংচুর, দুটি পাম্প ক্ষতিগ্রস্থ করে ৫হাজার টাকা ও একটি পাম্প নিয়ে যায়। তারা বলেন, পাম্প চুরির আগের দিন কেবা কাহারা আবুল কালাম ও হুমায়ুন কবিরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এঘটনার জেরে গ্রামের নিরিহ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম। ভাংচুরের ঘটনার সাথে যারা জড়িত না তাদের বিরুদ্ধে শুধু মামলাই দেয়নি। মামলার পর সাধারণ কৃষকের ধানের চাষাবাদ নষ্ট করতে সেচপাম্প চুরি ও ভাংচুর করে আতংক সৃষ্টি করতেছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির বলেন, এলাকার মানুষজন আমার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে এবং বাঁশঝাড় দিয়ে আমার বাড়ির মুলফটক বন্ধ করে দিয়ে আমার পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ১৫দিন ধরে। আমি বিচারের আশায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করায় তারা সেচপাম্প চুরির মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে। আমি ঘটনার সঠিক তদন্ত চাই এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার চাই।
এবিষয়ে কালিকাপ্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো: লিটন মিয়া বলেন, কিছুদিন ধরে গ্রামবাসীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি ঘটনা ঘটেছে। আমি চেষ্টা করছি দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করার জন্য।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, সেচপাম্প চুরি ও ভাংচুরের একটি অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়াও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বাড়িও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ শুনেছি। চেষ্টা করছি ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সেচপাম্প গুলো যেন চালু হয় এবং দুপক্ষের চলমান দ্বন্দ্ব সামাজিকভাবে মীমাংসার করা হয়।
Leave a Reply