মো: সোহেল মিয়া, হোসেনপুর থেকেঃ
শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুলের শুভ্রতা। শরৎ প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে কাশফুলের অপার সৌন্দর্য্য দিয়ে। কাশফুল বা কাশবন পছন্দ করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রকৃতিতে পালাবর্তনে কাশফুলের সৌন্দর্য্যে মানুষ ছুটে আসে কাশবনে।
বর্ষার কদমফুলের দিন শেষ হতে না হতেই শরতের কাশফুলের দেখা মেলে। কাশবাগানে বাতাস এলে কাশফুলেদের একসাথে মাথা দোলানো দেখে মানুষ কতই না মুগ্ধ হয়।
সত্যজিৎ রায়ের পথের ‘পাঁচালী’ ছবির কথা মনে আছে? কাশবনের ভেতর দিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে অপু আর দূর্গা।কাশবনের এই দৃশ্যটা নেওয়ার জন্য বছর খানেক সময় লেগেছে সত্যজিৎ রায়ের। তুমুল বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল কাশবনের সৌন্দর্য। তার পরের বছর আবার সেই একই জায়গায় কাশফুল ফোটার অপেক্ষায় থেকেছিলেন তিনি। কাশবনের উপকারের সীমা কেবল পানের বরজ, ঘরের চালা বা সবজিবাগানের বেড়া হিসাবে নয়, কাশফুলে আয়ূবের্দীয় গুনও আছে। মাটিধস রোধ করতে চাষ করা হয়। আখের অস্কুরোদগম ছাড়াও বিশেষ ধরনের কাগজের মন্ডও তৈরি হয় কাশ থেকে। সব মিলিয়ে কাশফুল কেবল শরতের মুগ্ধতার প্রতীক নয়, আমাদের জীবনযাত্রার সংগেও জড়িয়ে আছে কাশের জীবন।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের ১ কি:মি জুড়ে রয়েছে কাঁশফুলের বিশাল সমারোহ। যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে মুক্ত আনন্দ পেতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছুটে আসছে এ কাশবনে। বিশেষ করে শেষ বিকেলের মুহুর্তে এটার সৌন্দর্য আরো অনেকগুণ বেড়ে যায়। এ কারনে বেশিরভাগ পর্যটক আসছেন বিকেলে।
সাদা শুভ্র মেঘের ঝিলিকে কাশফুলের সৌন্দর্য এক কথায় প্রকাশ করা দুষ্কর।এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলা ঘটে কাঁশবনে। আগে হয়তো অনেকে এতটা কাঁশফুল নিয়ে মানুষের মাঝে এতো মাতামাতি ছিল না। তখন শরৎ নির্দিষ্ট নিয়মে আসতো কাঁশফুল নির্দিষ্ট নিয়মেই ফুটতো।
কিন্তু বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে কাশফুল নিয়ে মাতামাতি বেশি হচ্ছে। শরৎ কালে কাঁশফুলের সাথে ছবি তোলা এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী এ কাশফুল বাগানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছেন পর্যটকরা। প্রিয়জনকে নিয়ে প্রকৃতির সাথে একাকার করে দিতে হাজির হয়েছেন প্রকৃতি প্রেমিক। কেউ আসছে প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে, কেউ আসছে পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীরা কাশবনে সেলফি বা নিজের ছবিটা ক্যামেরা বন্ধি করছে।
উপজেলার দ্বীপেশর গ্রামের প্রকৃতি প্রেমিক তানভীর হাসান সিয়াম জানান, মানসিক শান্তি আর কাশফুলের শুভ্রতা উপভোগ করতে এখানে ছুটে এসেছি৷ প্রতিবছর ই এখানে কাশফুল ফুটে।
কাশফুল দেখতে আসা মাহফুজ রাজা জানান,কাশফুল ছাড়া শরত পরিপূর্ণ না। ব্রহ্মপুত্রের তীরে প্রতিবছরই কাশফুল ফুটে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক পর্যটক ফুল ছিড়েঁ নিয়ে যায়।
Leave a Reply